ভাব-সম্প্রসারণ: দীর্ঘ জীবন নয়, বরং মহৎ কর্মের মধ্যে মানবজীবনের সার্থকতা নিহিত। কর্মগুণে মানুষ অন্যের হৃদয়ে জায়গা করে নেয়।
মানুষ অনন্তকাল বেঁচে থাকে না। একেক মানুষ একেক রকম আয়ু ভোগ করে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। এমন অনেক মানুষ আছে, যারা দীর্ঘকাল পৃথিবীতে বেঁচে থাকে, কিন্তু মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তারা অন্যদের কাছে বিস্মৃত হয়ে যায়। কারণ, তাদের জীবন বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কাছে উল্লেখ করার মতো হয় না। জীবদ্দশায় তারা এমন কোনো কাজ করে যেতে পারে না, যার কারণে মানুষ তাদের স্মরণ করবে। তাই দীর্ঘায়ুর অধিকারী হয়েও সেসব ব্যক্তি জীবনকে গৌরবান্বিত করতে পারে না। পক্ষান্তরে এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা স্বল্প আয়ুর জীবনে নিজেকে স্মরণীয় করে গেছেন। যুগ যুগ ধরে তাঁদের নাম উচ্চারিত হয়। পৃথিবীতে মহৎ হৃদয়ের মানুষ মানবতার কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করেন, দেশ ও জাতির স্বার্থে প্রাণ দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না। একুশ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবনে গভীর জীবনবোধ ও মহৎ দৃষ্টিভঙ্গির জন্য কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য স্মরণীয় হয়ে আছেন। ভাষা আন্দোলনে যাঁরা শহিদ হয়েছেন, সেই রফিক, শফিক, বরকত, জব্বার, তাঁরা সকলেই ছিলেন বয়সের দিক দিয়ে একেবারে তরুণ। অর্থাৎ স্মরণীয়-বরণীয় হওয়ার জন্য বয়স গুরুত্বপূর্ণ নয়।
জীবনটা বেশি দিনের কি কম দিনের, সেটা মোটেই বিবেচ্য নয়। বিবেচ্য হলো মহৎ কর্ম করে বেঁচে থাকা। মহৎ কর্মের মাধ্যমে যাঁরা জীবনকে মহিমান্বিত করে তুলতে পারেন, প্রকৃত অর্থে তাঁরাই দীর্ঘজীবী বা চিরজীবী।